জঙ্গলের পথ থেকে ফিরলো সুব্রতের মরদেহ
প্রতিনিধির নাম :
-
প্রকাশিত:
বুধবার, ১ অক্টোবর, ২০২৫
-
১০
বার পড়া হয়েছে

মোঃ শামীম হোসেন – স্টাফ রিপোর্টার
সুন্দরবনের করমজল খাল—এখানে শিকারী কাঁকড়ার টানে জীবন বাজি রেখে প্রতিদিন নামেন বহু বনজীবী। খালজুড়ে রয়েছে কুমিরের ভয়াল উপস্থিতি। হঠাৎ আক্রমণ করাই এদের স্বভাব। গত বছর এই খালেই প্রাণ হারিয়েছিলেন মোশাররফ। তাই শিকারীদের মনে ছিল আতঙ্ক, তবুও জীবিকার তাগিদে ঝুঁকি নিয়েই নামতে হয়।
সেদিনও পাঁচজনের একটি দল কাঁকড়া শিকারে গিয়েছিলেন। সবাই খাল পেরিয়ে উঠলেও, সুব্রত মণ্ডল—ছোটখাটো গড়নের মানুষ—উঠতে গিয়ে সামান্য খাবি খেলেন পানিতে। সেই মুহূর্তেই পানির নিচ থেকে উঠে এলো এক বিশাল কুমির। বজ্রগতিতে আছড়ে পড়ে একসাথে তার দুই পা চেপে ধরলো ভয়ঙ্কর চোয়ালে।চোখের পলকে সঙ্গীরা সুব্রতের হাত চেপে ধরলো। শুরু হলো জীবনের জন্য প্রাণপণ টানাটানি। চারজন মিলে প্রায় তিন মিনিট লড়েও তারা হার মানলো নদীর নিচের সেই দানবীয় শক্তির কাছে। সুব্রতকে টেনে নিয়ে গেলো কুমির—অদৃশ্য গভীরতার অন্ধকারে। এরপর শুরু হলো দীর্ঘ অনুসরণ। প্রায় ১৫ মিনিট পানির নিচে লুকিয়ে থাকার পর সুব্রতকে মুখে নিয়ে ভেসে উঠলো কুমিরটি। বিশাল শরীরের সঙ্গে তুলনায় সেই ক্ষতবিক্ষত মানুষ যেন ছোট্ট এক শিকার মাত্র। অনেকক্ষণ সে ভেসে বেড়ালো, পিছন পিছন সহযাত্রীরা আর বনরক্ষীদের ট্রলার। সুযোগের অপেক্ষায় ছিল সবাই। কিন্তু হঠাৎ শিকার মুখে নিয়ে আবারও গভীর জলে ডুব দিলো কুমির—আর আরেকবারও ভেসে উঠলো না। সন্ধ্যা নেমে এলো। করমজল খালে ভিড় জমলো গ্রামের মানুষ। অন্ধকারে কীভাবে উদ্ধার করা সম্ভব? যদি কুমির শিকার নিয়ে অন্য খালে ঢুকে পড়ে! কেউ বললো, পশুর নদী দিয়ে ঢাংমারীর দিকে সাঁতরেছে দানবীয় প্রাণীটি। তবে খালের ভেতরে সুব্রতকে ফেলে গেছে—এমন আলোও পাওয়া গেল। অবশেষে সাহসী কয়েকজন ঝাঁপ দিলেন পানিতে। ভাটা নামার আগেই খুঁজে বের করতে হবে প্রিয় সহযাত্রীর দেহ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুসন্ধানের পর ঢাংমারীর আলম খুঁজে পেলেন সুব্রত মণ্ডলকে। রক্তাক্ত, নিথর শরীরটিকে বুকে জড়িয়ে ধরলো সহযাত্রীরা।গ্রামের পথে ছুটে চললো সবাই। ওদিকে ঘরে অপেক্ষায় স্ত্রী আর স্বজনরা। জীবিকার একমাত্র ভরসা সুব্রত আজ ফিরছে—কিন্তু নিথর লাশ হয়ে। সামনে অপেক্ষা করছে দাহক্রিয়া আর এক অসম্ভব জীবনসংগ্রাম। কারণ সুব্রতই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ, ছিলেন সুন্দরবনের এক সাহসী বনজীবী।
সংবাদটি শেয়ার করুন
আরো সংবাদ পড়ুন