র্যাবের অভিযানে বিদেশী মদসহ ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী গ্রেফতার।
প্রতিনিধির নাম :
-
প্রকাশিত:
শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
-
৫
বার পড়া হয়েছে

মোঃ আনোয়ার হোসেন শেরপুর জেলা প্রতিনিধি।
শেরপুরে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১৪), সিপিসি-১, জামালপুর ক্যাম্পের দুটি পৃথক অভিযানে বিদেশী মদসহ মাদক চক্রের তথ্য উদঘাটন এবং ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় ৪৪ বোতল ভারতীয় বিদেশী মদ জব্দ করা হয়, যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।র্যাব সূত্রে জানা যায়, ১২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাত ১০টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে, শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও কালাপানি এলাকায় একটি মদের চালান আনা হয়েছে। খবরের সত্যতা যাচাই করতে র্যাবের একটি দল দ্রুত ওই এলাকায় অবস্থান নেয়। লিচু বাগানের পাশের একটি কাঁচা রাস্তায় কয়েকজন মাদক কারবারী বোতলজাত মদ স্থানান্তরের জন্য অপেক্ষা করছিল। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা দ্রুত পালিয়ে যায়। তবে ঘটনাস্থল থেকে ফেলে যাওয়া চালান জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে গণনা করে দেখা যায়, মোট ৪৪ বোতল বিদেশী মদ সেখানে রাখা ছিল। প্রাথমিক যাচাইয়ে জানা গেছে, এসব মদ ভারতীয় বাজার থেকে সীমান্তবর্তী এলাকা হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্ট ও ব্যক্তিগত চাহিদা মেটাতে সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল। উদ্ধারকৃত মদের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদে তিনজন মাদক ব্যবসায়ীর নাম উঠে আসে। তারা হলেন, আসমত আলী (৩০), মোঃ ওয়াসিম মিয়া (৩৫) এবং মোঃ ইয়াসিন আলী (২৬)। প্রত্যেকেই নালিতাবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। এদের বিরুদ্ধে পূর্বেও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে অভিযানের সময় তারা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। র্যাব জানিয়েছে, এদের গ্রেফতারের জন্য বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।অন্যদিকে ১৩ সেপ্টেম্বর শনিবার রাত সাড়ে বারোটার দিকে র্যাব-১৪ এর আরেকটি বিশেষ দল নালিতাবাড়ী থানার মধুটিলা ইকোপার্ক এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় পূর্ব সমশ্চুরা এলাকার মৃত মান্নাত আলীর ছেলে খবির ওরফে কবির (২৫) কে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে পূর্বে মামলা দায়ের হয় এবং দীর্ঘদিন ধরে তিনি পলাতক ছিলেন। র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারির ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়।অভিযান শেষে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা র্যাবের অঙ্গীকার। সীমান্তবর্তী এলাকাকে ঘিরে মাদকের রুট ক্রমেই সক্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে ভারতীয় মদ, ইয়াবা ও গাঁজা সীমান্ত পেরিয়ে দেশে ঢুকছে বলে একাধিক তথ্য পাওয়া গেছে। র্যাব আরও জানায়, উদ্ধারকৃত বিদেশী মদ ও গ্রেফতারকৃত আসামীকে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নালিতাবাড়ী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। একইসঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের পুরো নেটওয়ার্ক শনাক্ত করতে তদন্ত চালানো হচ্ছে।এলাকার সচেতন মহল বলছে, সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে মাদক চোরাচালান একটি বড় সমস্যা। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করার জন্য এই মাদকচক্র সক্রিয় হয়ে উঠছে। নিয়মিত র্যাব ও পুলিশের অভিযান বাড়ানো গেলে এ ধরনের কার্যক্রম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানই যথেষ্ট নয়; সমাজের প্রতিটি স্তরে মাদকবিরোধী সচেতনতা তৈরি করতে হবে। পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সর্বত্র যদি মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া যায়, তবে চোরাকারবারীরা একসময় নিরুৎসাহিত হবে।মাদকবিরোধী সংগঠনগুলোর ভাষ্য, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার হলেও এর প্রবাহ কমছে না। সীমান্তরক্ষী বাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় জোরদার হলে চোরাচালান রোধ করা সম্ভব হবে। শেরপুরের সাম্প্রতিক এই দুটি অভিযান আবারও প্রমাণ করেছে যে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে মাদক চোরাচালানকারীরা সক্রিয়। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা পেলে এ অপকর্ম রোধ করা সম্ভব। উদ্ধারকৃত মদের চালান ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রেফতার নিঃসন্দেহে মাদকবিরোধী যুদ্ধে একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
সংবাদটি শেয়ার করুন
আরো সংবাদ পড়ুন