সময়সীমা পার, পিআইসি-গণশুনানির খবর নেই: শাল্লার কৃষকরা শঙ্কিত
প্রতিনিধির নাম :
-
প্রকাশিত:
শনিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
-
৪
বার পড়া হয়েছে

শাল্লা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি মোঃ দিলুয়ার হোসেন
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় আসন্ন বোরো মৌসুমের ফসল রক্ষায় এখন পর্যন্ত হাওর রক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু না হওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও, এখন পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। এমনকি কৃষক ও অংশীজনদের নিয়ে বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের জন্য যে গণশুনানি বাধ্যতামূলক, সেটিরও কোনো খবর নেই।
নিয়ম অনুযায়ী, ডিসেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে কাজ শুরু করে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তা শেষ করার কথা। কিন্তু উপজেলার একাধিক হাওরে প্রাথমিক জরিপ বা ‘প্রি-ওয়ার্ক সার্ভে’ শেষ হলেও মূল কাজ শুরুর প্রক্রিয়া, অর্থাৎ পিআইসি গঠন নিয়ে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
কৃষক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক একরামুল হোসেন জানান, এভাবে কাজ বিলম্বে শুরু হলে বাঁধ নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হতে পারে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব নাও হতে পারে। ফলে, ২০১৭ সালের মতো অকাল বন্যায় ফসলডুবির ভয়াবহ পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে জানান তিনি। “
শঙ্কিত কণ্ঠে শাল্লার একজন কৃষক জানান এখন ডিসেম্বর মাস, দেখতে দেখতে মাস শেষ হতে চললো, অথচ আমরা এখনো গণশুনানির খবরই পেলাম না। প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে যদি অন্য কেউ পিআইসিতে ঢুকে পড়ে, তবে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। সময়মতো কাজ শেষ না হলে আমাদের পেটের ধান রক্ষা করা কঠিন হবে,”
উপজেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি তরুণ কান্তি দাস বলেন, যত দ্রুত সম্ভব বাঁধের কাজ করা দরকার, পাশাপাশি নদী খনন কারাও জরুরী। নদী খনন না করা হলে পানির ধারণ ক্ষমতার বাহিরে চলে গিয়ে বাঁধগুলি ক্ষতির মুখে পরবে। যার ফলে কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (এসও) উবাইদুল হকের পক্ষ থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে যে, বাঁধের কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য এই সপ্তাহে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে এবং আগামী সপ্তাহের মধ্যেই গণশুনানি করা হবে। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রকৃত কৃষকদের অংশগ্রহণে পিআইসি-এর মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের মূল কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়াস চন্দ্র দাস বলেন, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনে গণশুনানি বাধ্যতামূলক। আমরা নিশ্চিত করছি যে, এই প্রক্রিয়াটি দ্রুততম সময়ে, স্বচ্ছতার সাথে এবং প্রকৃত কৃষকদের অংশগ্রহণে সম্পন্ন করা হবে। পিআইসি-তে যেন কোনো অকৃষক বা স্বার্থান্বেষী মহল ঢুকতে না পারে, সে বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন কঠোর নজরদারি করবে। আমরা ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পিআইসি গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মাঠ পর্যায়ে মূল কাজ শুরু করতে এবং নির্ধারিত সময়সীমা অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করতে কঠোরভাবে তদারকি করব। গুণগত মান বজায় রাখতে নিয়মিত মনিটরিং করা হবে।
তবে কৃষকদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় গণশুনানি করে প্রকৃত কৃষকদের নিয়ে পিআইসি গঠন করতে হবে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করতে হবে। অন্যথায়, বিলম্বে কাজ শুরু হলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটতে বাধ্য হবেন।
সংবাদটি শেয়ার করুন
আরো সংবাদ পড়ুন