দাকোপের মাঠজুড়ে শুধু নবান্নের সোনার ধান বাম্পার ফলনের আশায় দিন গুনছে চাষীরা
প্রতিনিধির নাম :
-
প্রকাশিত:
সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫
-
২
বার পড়া হয়েছে
Oplus_16908288

মোঃ শামীম হোসেন – স্টাফ রিপোর্টার
দাকোপের প্রতিটি মাঠের যেদিকে তাকানো যায়, যেন আর কিছু নেই মাঠজুড়ে গালিচার মতো কেবলই দারিয়ে আছে সোনার মতো ধান আর ধান। মাঠের কোথাও হেমন্তের রোদ গায়ে মেখে ধানের গাছ খাড়া হয়ে আছে, কোথাও হেলে পড়েছে ধানের গোছা। সবখানেই হেসে খেলে সময় পার করছে এখন ধানের মাঠ। সড়কের পাশে, গ্রামের ভেতর, যেদিকেই যাওয়া যায়; দেখা মিলছে সোনালি ধানের। মাঠ এখন জীবনানন্দ দাশের কবিতার মতো অনেকটা—‘শুয়েছে ভোরের রোদ ধানের উপরে মাথা পেতে/ অলস গেঁয়োর মতো এইখানে খেতে/ মাঠের ঘাসের গন্ধ বুকে তার—চোখে তার শিশিরের ঘ্রাণ/ তাহার আস্বাদ পেয়ে অবসাদে পেকে ওঠে ধান।’.. দাকোপের সবুজ মাঠগুলো এখন ধান পাকার সুখে সোনালি হয়ে উঠছে। পাকা ধানের মাঠ যেন ‘আর কটা দিন সবুর করো’—কৃষকের ঘরে এমন বার্তা পাঠাচ্ছে। আর কয়েকটা দিন পরই মাঠে মাঠে শুরু হবে ধান কাটা, ধান তোলার উৎসব। রাতের শিশির জমে আছে ধানের পাতায়। রবিবার তখন ভোরের আলো একটু একটু করে আভা ছড়াতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে সেই আভা মুছে ফরসা হয়ে উঠছে আকাশ। দাকোপ উপজেলার বাজুয়াসহ কয়েকটি এলাকায় তখনো মানুষের ঘুম ভাঙেনি। চারদিকে নীরবতার শান্তি। পশ্চিম বাজুয়া সড়ক দিয়ে পোদ্দারগঞ্জ যেতে যে গ্রামীণ পাকা সড়কটি চলে গেছে, সেই সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন জাতের গাছ সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সকালের রোদে ঝলমল করছে, রোদে স্নান করছে সেই গাছেরা। সেই সড়কের পাশে শুয়ে আছে হেমন্তের বিস্তীর্ণ এক মাঠ। সেই মাঠে এখন নুয়ে আছে থরে থরে সোনালি ফসল। ধানের পাতা, পাকা ও আধাপাকা ছড়া থেকে ঝরে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা শিশির। সড়কের পাশে মাথা উঁচু করে থাকা সারি সারি গাছের ছায়া পড়ছে পশ্চিম পাশের ফসলের খেতে, ঢেউ খেলানো ফসলের বুকে। তাতে ধানের বুকে তরল কালো রঙে ছবি ফুটে উঠছে। যেন কেউ ওখানে সারা রাত ধরে ছবি এঁকে গেছে। এই ছবি শুধু তাঁরাই দেখতে পারবেন, যাঁরা সকালের আলোয় ওই পথ ধরে যাবেন। এখন এমন সোনালি চেহারা শুধু এসব মাঠেই ফুটে উঠছে না, জেলার প্রায় সবদিকে মাঠজুড়ে একই রকম সোনালি আভা। জেলার সকল উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি মাঠই এভাবে সোনালি হয়ে উঠছে। কিছু কিছু স্থানে পাকা ধান কাটতে দেখা গেছে। কৃষকদের যদিও ধান কাটার পরিমাণ এখনো অনেক কম। সড়কের পাশের সোনালি ধানের ওপর গাছের ছায়া পড়েছে। দেখে মনে হয়, কেউ যেন ছবি এঁকে রেখেছে। উপজেলার পশ্চিম বাজুয়ার কৃষক অনুপম তিনি বলেন, ‘এলাকায় হকলর (সবার) আগে ধান রুইছি (রোপণ করেছি)। এর লাগি হকলর আগে কাটরাম। এখনো অন্যরার ধান পাকছে না। ধান ভালা অইছে। কেউ যদি কয় (বলে) ধান ভালা অইছে না (হয়নি), এটা আমি মানতাম নায় (মানব না)।’ তিনি ১৯ কিয়ার (৩০ শতাংশ সমান এক কিয়ার) জমিতে রণজিৎ, ব্রি-ধান ৪৯ জাতের ধান চাষ করেছেন। এ ছাড়া নিজেদের খাওয়ার জন্য কালিজিরা, চিনিগুঁড়া ও বিরইন ধানের চাষ করেছে।অনেক খেতের ধান দেখতে সোনালি হলেও এখনো পুরোদমে পাকেনি। সবুজে, সোনালি রঙে মাখামাখি হয়ে আছে খেতগুলো। কোথাও কালো রঙের এক-দুই টুকরা খেত মাঠের ভেতর অন্য রকম বৈচিত্র্য নিয়ে এসেছে। কালো রঙের এই খেত আর কিছু নয়, বিন্নি (স্থানীয় নাম বিরইন) ধানের। দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন এবার দাকোপে ১৯২৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ হয়েছে। সকল জায়গায় ধানের ফসল ভালো। কোথাও কোন প্রকার পোকার আক্রমণ হয়নি আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমন ধানের ফলন খুবই ভালো। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আসমত হোসেন বলেন দাকোপে গত বছরও আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল এবারও আরো ভালো ফলন হয়েছে আমন ধানের। যদি বাজার দর ভালো থাকে তবে কৃষকরা সকলেই লাভবান হবে বলে আশা করা যায়।
সংবাদটি শেয়ার করুন
আরো সংবাদ পড়ুন