প্রতিবেদন এডমিন
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে সেগুলো রাষ্ট্রমালিকানায় নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
গতকাল সোমবার বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ নির্দেশ দেয়।
ট্রাইব্যুনালের এ আদেশের পর হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সম্পদ নিয়ে জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে। জুলাই বিপ্লবের পর জানা যায়, হাসিনা ও তার পরিবার এবং দেশের ১০ ব্যবসায়ী গ্রুপের ৫৭ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা জব্দ হয়েছিল। এর মধ্যে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ রয়েছে ১০ হাজার ৪৫২কোটি টাকা। দেশে জব্দ হয়েছে ৪৬ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছিল।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সমন্বয়ে যৌথ তদন্ত দলগুলো গঠন করা হয়। তদন্ত কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছে বিএফআইইউ। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য জানানো হয়।
তদন্তের আওতায় শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও আছে এস আলম গ্রুপ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ পরিবারের আরামিট গ্রুপ, বিতর্কিত নাবিল গ্রুপ, বেক্সিমকো, নাসা, সিকদার, বসুন্ধরা, সামিট, ওরিয়ন ও জেমকন গ্রুপের নাম জানা যায় ।
এর মধ্যে চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংসহ পাঁচটি দেশ ও কেম্যান আইল্যান্ডস দ্বীপপুঞ্জে হাসিনার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছিলেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, হাসিনা, তার পরিবার ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিএফআইইউ এবং যৌথ তদন্ত দল অনুসন্ধানে
অবৈধভাবে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সম্পদের সন্ধান পেয়েছে।
তিনি বলেন, বিএফআইইউ ও যৌথ তদন্ত দলের অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং এবং পশ্চিম ক্যারিবিয়ান সাগরের দ্বীপ কেম্যান আইল্যান্ডসে শেখ হাসিনার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া মালয়েশিয়ার একটি
ব্যাংকে রাশিয়ান ‘স্ন্যাশ ফান্ডের’ অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
শফিকুল আলম বলেন, ১২৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬৩৫ দশমিক ১৪ কোটি টাকা, রাজউকের এক কোটি ৮০ লাখ টাকা (দলিল মূল্য) মূল্যের ৬০ কাঠার প্লট ও আট কোটি ৮৫ লাখ টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ জমিসহ আটটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে।তবে ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় হাসিনার মোট সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করেছিলেন চার কোটি ৩৬ লাখ টাকা। তখন হলফনামায় উল্লেখ করা হয়, ওই বছর তিনি এক কোটি সাত লাখ টাকা আয় করেন এবং এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এসেছে কৃষিখাত থেকে। এ খাত থেকে তার আয় ২০১৮ সালের তুলনায় চারগুণ বেড়েছে।
হাসিনার আয়কর রিটার্ন অনুযায়ী তার আয় এক কোটি ৯১ লাখ টাকা । সিকিউরিটিজ থেকেও তার আয় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৮ থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত চার বছরে তিনি ফিক্সড ডিপোজিট ও সঞ্চয়পত্র কিনেছিলেন মোট ৭৫ লাখ টাকার ।
আর অপর প্রধান আসামি আসাদুজ্জামান কামালের দেশ-বিদেশে বিপুল ব্যবসা আছে বলে জানা যায়। ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে বিগত আওয়ামী সরকারের প্রভাবশালী এমপি-মন্ত্রীরা কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। পাচার করেন হাজার কোটি টাকা।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে একে একে সেসব দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসছে।
আওয়ামী সরকারের প্রভাবশালী সাবেক এ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার পরিবারের নামে শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পায় দুদক। পাশাপাশি সংস্থাটির অনুসন্ধানে আরো ২০০ কোটিটাকার বেশি মানি লন্ডারিংসংক্রান্ত অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটির অনুসন্ধান টিম। সব মিলিয়ে আপাতত ৩০০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে।