নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির কোন্দলে সুবিধায় ইসলামী দল
প্রতিনিধির নাম :
-
প্রকাশিত:
রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫
-
৮
বার পড়া হয়েছে

রিপোর্টার মাওলানা আব্দুল মালেক : জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর ও বন্দর) সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী তৎপর রয়েছেন। তারা মনোনয়নের লড়াইয়ে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এ নিয়ে নিজ দলের মধ্যে বাড়ছে কোন্দল, বিভক্ত হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। অন্য দিকে বিএনপির সাবেক মিত্র জামায়াত এবার একক প্রার্থী চূড়ান্ত করে বেশ জোর কদমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পিছিয়ে নেই অন্যান্য ইসলামি ও সমমনা দলগুলোর পার্থীরা। তারাও ভোটযুদ্ধে সর্ব শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। ভোটারদের কাছে নিজ নিজ দলের বার্তা পৌঁছে দিতে পালন করছেন নানা কর্মসূচি।
জানা গেছে, শহর ও বন্দর মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সীমানা নির্ধারিত। জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য অনুযায়ী এই আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৭ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৫৩ জন এবং মহিলা ভোটার ২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৬৫ জন। এখানে ৫ জন হিজড়া ভোটারও রয়েছেন। আর এই আসনেই বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ তালিকায় দলটির শীর্ষ নেতারাও যেমন রয়েছেন তেমনি আছেন শিল্পপতিরাও। তাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন সাবেক যুবদল নেতা ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ, প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আবু জাফর আহমেদ বাবুল। এছাড়া এই তালিকায় রয়েছেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও লন্ডনের নর্থামব্রিয়া ইউনিভার্সিটির বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আলিয়ার হেসেন।
অন্যান্য রাজনৈতিক দলের চুড়ান্ত প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক নারায়ণগঞ্জ মহানগরের আমীর মাওলানা মাঈনুদ্দিন আহমেদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, খেলাফত মজলিস নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ডা. আল-আমিন রাকিব, ইসলামী ঐক্যজোট নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মুফতি জাকির হোসেন কাশেমী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান। গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম সুজন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জাতীয়পাটির নেতা মাকসুদ হোসেন। এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি থেকে আহমেদুর রহমান তনুর নাম শোনা যাচ্ছে।
সূত্র মতে, স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি প্রায় সমানভাবেই নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। তবে বেশির ভাগ সময়ে এই আসনটিতে প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্যরাই এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের ২০১৪ সাল পর্যন্ত এখানে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ছিলেন নাসিম ওসমান। তিনি ওই বছরের ৩০ এপ্রিল মারা যান। এবং একই বছর উপনির্বাচনে এ আসনে পূনরায় জাতীয় পার্টি থেকে এমপি হন তার ছোট ভাই সেলিম ওসমান। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওসমান পরিবারের সদস্যরা পলাতক রয়েছেন। ফলে এবারের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলো বিএনপি। তবে মনোনয়ন পাওয়াকে ঘিরে একাধিক প্রার্থী তৎপর থাকায় দলের ভেতরে তৈরি হয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা, যা এখন অন্তঃকোন্দলে রূপ নিয়েছে। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ঘিরে দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভাজন দেখা দিয়েছে। বিএনপির বড় একটি অংশ রয়েছে মাসুদুজ্জামান ও প্রাইম বাবুলের পক্ষে। ফলে পৃথক বলয় তৈরি হয়েছে তাদের। অন্যদিকে, নিজ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বলয় তৈরি করেছেন অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত ও অ্যাডভোকেট টিপু। আর নিজ অনুসারীদের নিয়ে দলীয় কর্মসূচিগুলো পালন করছেন তারা। তবে সভা-সমাবেশ গুলোতে বক্তব্য প্রদানকালে একে অপরকে নিয়ে কঠোর ভাষা প্রয়োগের পাশাপাশি কথার লড়াইয়ে লিপ্ত হতে দেখা যাচ্ছে নেতাদের। ফলে দলের মধ্যে বাড়ছে কোন্দল।
অন্যদিকে, বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকলেও জামায়াত একক প্রার্থী নিয়ে মাঠে নেমেছে জোরেশোরে। পিছিয়ে নেই অন্যান্য ইসলামি ও সমমনা দলগুলোও। তারাও নির্ধারিত প্রার্থীকে মাঠে নামিয়েছেন। বিশেষ করে দীর্ঘদিনের বন্ধুকে ছাড়াই নিজ নিজ দলের সক্ষমতা প্রমাণের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছে জামায়াত। দলের নেতাকর্মীরা সাংগঠনিক কর্মসূচির পাশাপাশি সামাজিক ও ধর্মীয় নানা আয়োজনে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। সাধারণ ভোটারদের কাছে টানতে কাজ করছে দলটি। ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণে লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ ও কর্মীসভাসহ নানা কার্যক্রম চালাচ্ছেন প্রার্থী ও তার কর্মী-সমর্থকরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকায় নিজেদের কোন্দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। এনিয়ে দলের ভেতরে ও বাইরে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এর প্রভাব ভোটারদের মাঝেও পড়বে বলে মনে করছেন তারা। তারা বলছেন, বিএনপির জনসভার মূল বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে ব্যক্তিগত সমালোচনায়। নির্বাচনের কোনো অ্যাজেন্ডা নাই, ভোটারের কাছে কোনো কমিটমেন্ট নাই। জনসভার আয়োজন করছে যেন একে অপরের গিবত গাওয়ার জন্য। অন্য দিকে তাদের এই লড়াইয়ের সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সহ অন্যান্য সমমনা দলগুলো। বিশেষ করে ইসলামী দলগুলোর একক প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই ভোটারদের কাছে টানতে জোর প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে তাদের। প্রার্থীরা এলাকায় নানা কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে নিজ নিজ দলের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন জনগণের কাছে। যা নির্বাচনে তাদের দলের পক্ষে সুফল বয়ে আনতে পারে, অন্য দিকে বিএনপির অন্তঃকোন্দলে ভোটের মাঠে বেকায়দায় পরবে বলে মনে করছেন তারা। যদিও তৃনমূলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপে এই বিরোধ মিটে যাবে এবং যিনি দল থেকে মনোনয়ন পাবেন তার পক্ষেই কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব নেতা একত্রিত হয়ে কাজ করবেন।
সংবাদটি শেয়ার করুন
আরো সংবাদ পড়ুন