প্রিন্ট এর তারিখঃ অক্টোবর ২০, ২০২৫, ৩:৫৯ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ২০, ২০২৫, ১:৩০ পি.এম
খুলনা অঞ্চলের নদ-নদীতে দেড় বছরে ভেসে উঠেছে ৭০টিরও বেশি মরদেহ
মোঃ শামীম হোসেন - স্টাফ রিপোর্টার
খুলনা অঞ্চলের নদ-নদী এখন আতঙ্কের নাম। জীবনের স্রোতের বদলে যেন এখানে বয়ে চলছে লাশের স্রোত। গত দেড় বছরে খুলনা ও আশপাশের নদ–নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৭০টিরও বেশি অজ্ঞাত ও ক্ষতবিক্ষত মরদেহ। তবে এসব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় নেই উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি। নৌ-পুলিশের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন নদী থেকে এসব মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেলেও ২৭টি মরদেহের পরিচয় এখনও অজানা রয়ে গেছে। ২০২৫ সালে খুলনা অঞ্চলে নথিভুক্ত ৯টি নদীঘটিত হত্যা মামলার একটিতেও এখনো তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি নৌ-পুলিশ। এ বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি। প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা থেকে খুলনায় এসে নিখোঁজ হন বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাজকির আহমেদ। সাত দিন পর খুলনার ভৈরব নদের গিলাতলা বালুরঘাট থেকে তার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্তে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য, প্রেমিকার প্রাক্তন স্বামী বন্ধুদের নিয়ে তাকে হত্যার পর মরদেহ গুম করতে নদীতে ফেলে দেয়।গত ৭ জুন বিকেলে খুলনার রূপসা উপজেলার নন্দনপুর গহেশ্বরগাতী গ্রামের নিজ বাড়ির সামনে থেকে নিখোঁজ হন যুবক আহাদ শেখ। ঘটনার দুদিন পর বাড়ির কাছের আঠারোবেকী নদীতে ভেসে ওঠে এক ব্যক্তির মরদেহ। আসামি গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, আহাদকে হত্যার পর মরদেহ নদীতে ফেলে দেয় তারা। তবে ডিএনএ জটিলতায় চার মাস পেরিয়ে গেলেও আহাদের পরিচয় শনাক্ত বা মরদেহ হস্তান্তর হয়নি। শুধু এই দুটি ঘটনা নয়, এমন অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী হচ্ছে খুলনা অঞ্চলের নদ–নদী। প্রতিনিয়ত ভেসে উঠছে ক্ষতবিক্ষত দেহ। নৌ-পুলিশের তথ্য বলছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই অঞ্চলের নদী থেকে উদ্ধার হয়েছে ৭০টিরও বেশি মরদেহ। এর মধ্যে ৪৫টির পরিচয় মিললেও ২৭টি মরদেহের পরিচয় অজানা রয়ে গেছে। পরিসংখ্যান বলছে, উদ্ধার হওয়া মরদেহগুলোর বেশির ভাগই হত্যাকাণ্ডের শিকার। আর গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে এ সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। আর ২০২৫ সালে ৯টি হত্যা মামলার একটিতেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি নৌ-পুলিশ। গত এক বছরে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর জেলাজুড়ে বিভিন্ন নদ-নদী থেকে উদ্ধার হয়েছে মোট ৫০টি মরদেহ। এর মধ্যে ৩২ জন পুরুষ, সাতজন নারী এবং ১১ জন শিশু। অপরিচিত অবস্থায় ২০ জনের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। নৌ-পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, উদ্ধারকৃত লাশের মধ্যে রূপসা নদী থেকে ৪০ শতাংশ, ভৈরব নদ থেকে ৩০ শতাংশ, পশুর নদী থেকে ২০ শতাংশ এবং অন্যান্য নদী থেকে ১০ শতাংশ উদ্ধার হয়েছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। আধুনিকায়নের মাধ্যমে অপরাধীদের ধরার পাশাপাশি অপরাধ কমাতে কঠোর আইন প্রয়োগের বিকল্প নেই।খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ডিসিপ্লিনের বিভাগীয় প্রধান পুনম চক্রবর্তী বলেন, আলামত নষ্ট ও মরদেহ গোপন করতে অপরাধীরা বদলাচ্ছে কৌশল। এছাড়া সামাজিক অস্থিরতা এবং কঠোর আইন প্রয়োগের অভাবে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। খুলনা অঞ্চলের নৌ-পুলিশ সুপার ডা. মুহাম্মদ মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর জেলার নদী নিয়ে গঠিত পুলিশের নৌ অঞ্চল। কিন্তু দীর্ঘ সীমানা আর প্রশাসনিক জটিলতায় অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তিনি জানান, পারস্পারিক সহযোগিতার মাধ্যমে সংকট সমাধানের চেষ্টা চলছে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত