প্রিন্ট এর তারিখঃ অক্টোবর ১৩, ২০২৫, ১২:০৬ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ১২, ২০২৫, ৮:১৬ এ.এম
মান্দায় সাক্ষীকে আসামি বানিয়ে আদালতে পুলিশের চার্জশিট
আল আমিন নওগাঁ প্রতিনিধি
নওগাঁর মান্দায় মানব পাচারের পৃথক তিনটি মামলার সাক্ষী ও তার প্রবাসী স্বামীকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। মামলার বাদিদের অভিযোগ, তদন্ত কর্মকর্তা মান্দা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাহিদুল ইসলাম তাদের কাছে ঘুষ দাবি করেছিলেন। দাবি অনুযায়ী পুরো টাকা না দেওয়ায় সাক্ষীকেই আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন তিনি।
এ ঘটনায় মামলার বাদিদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে ২২ মার্চ নওগাঁর মান্দা ও নিয়ামতপুর উপজেলার ৯ যুবক ‘জেএস ইস্কারশনস’ নামের একটি ট্রাভেলস এজেন্সির মালিক যতন সূত্রধরের মাধ্যমে কিরগিস্থানে পাড়ি জমান। কিরগিস্থানে পৌঁছার পর দালালচক্র তাদের হেফাজতে নিয়ে একটি ঘরে আটকে রাখে। আরও টাকার দাবিতে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। ৩ মাস আটক থাকার পর যতন সূত্রধরের ছেলে রাহুল সূত্রধরের হাতে প্রত্যেকের জন্য আরও ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা করে দিয়ে দেশে ফিরে আসেন তারা।
ভুক্তভোগী হাসান আলী বলেন, ‘মাত্র ২ দিনের ভিসার আমাদের কিরগিস্থানে পাঠানো হয়েছিল। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। পরে বাড়িতে ফোন দিয়ে টাকা দেওয়ার পর বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।’
মামলার বাদি হোসেন আলী বলেন, ‘আমার দুই ভাইকে চাকরি দেওয়ার নামে কিরগিস্থানে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। এ ঘটনায় নওগাঁ আদালতে ট্রাভেলস এজেন্সির মালিক যতন সূত্রধরসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলা করি। একই ঘটনায় উল্লেখিত আসামিদের বিরুদ্ধে আরও ৩টি মামলা করেন ভুক্তভোগীরা।
বাদি হোসেন আলী আরও বলেন, ‘এর মধ্যে ৩টি মামলার তদন্ত করেন মান্দা থানার উপপরিদর্শক সাহিদুল ইসলাম। মামলার তদন্তের জন্য এসআই ২ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হলেও সাক্ষী সুলতানাকে আসামি বানিয়ে চার্জসীট দেওয়া হয়েছে। অথচ আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। সাক্ষী সুলতানার স্বামী সৌদি প্রবাসি ফিরোজ আলীকেও আসামি করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। মামলার ৩ নম্বর আসামি রাহুল সূত্রধর প্রাপ্তবয়স্ক হলেও তাকে শিশু দেখিয়ে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’
মামলার সাক্ষী মোছা. সুলতানা বলেন, ‘আমার উপস্থিতিতে ভুক্তভোগীরা যতন সূত্রধর ও তার সহযোগীদের টাকা দিয়েছিল। এ কারণে মামলায় সাক্ষী হিসেবে আমার নাম দিয়েছে। টাকা না পেয়ে এসআই সাহিদুল ইসলাম আমাকেসহ সৌদি প্রবাসি স্বামীকেও আসামি করেছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাহিদুল ইসলাম টাকা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘তদন্তে সুলতানা ও তার স্বামীর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলেই চার্জশিটে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রাহুল সূত্রধর অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাকে অব্যাহতির সুপারিশ করেছি।’
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত