স্টাফ রিপোর্টার: মো: আল-আমীন আহমেদ,
ভালুকা: ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় (মল্লিকবাড়ী, ডাকাতিয়া, হবিরবাড়ি, কাচিনা, মেদুয়ারী) আমন ধানের চাষ শুরু হয়েছে। চাষিদের ক্ষেতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শ্রমিকরাও কাজ করে লাভবান হচ্ছেন। স্থানীয় কৃষক মো. শহিদ মিয়া জানান, এবছর তিনি BR11 জাতের ধানের বীজ রোপণ করেছেন এবং ভালো ফলনের আশায় রয়েছেন। ভালুকার কৃষি কর্মকর্তা জানান, এবছর বন্যার আশঙ্কা কম থাকায় গত বছরের তুলনায় ধানের ফলন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মৌসুমি এ ফসল সাধারণত আষাঢ় থেকে কার্তিক (জুলাই থেকে নভেম্বর) মাস পর্যন্ত চাষ করা হয়। ধান রোপণের সময়কাল আষাঢ় থেকে শ্রাবণ (জুন থেকে আগস্ট) এবং ধান কাটার সময় কার্তিক থেকে অগ্রহায়ণ (নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর)। প্রধান ধানের জাত হিসেবে BRRI dhan39, BRRI dhan49, BRRI dhan75, BRRI dhan87 এবং স্থানীয় জাত যেমন কাটারি ভোগ, কালিজিরা উল্লেখযোগ্য।
কৃষি বিভাগের মতে, আমন ধান বৃষ্টি নির্ভর প্রধান বর্ষাকালীন ফসল। বাংলাদেশে আমন ধান তিন ভাগে বিভক্ত — আউশ আমন, মাঝারি আমন ও দেরি আমন। উন্নত জাতের মধ্যে BR11, BR22, BRRI dhan33, BRRI dhan49, BRRI dhan57, BRRI dhan71 ইত্যাদি এবং স্থানীয় জাতের মধ্যে কালোজিরা, জিরাশাইল, দুধকলম, চামানভোগ উল্লেখযোগ্য।
জমি প্রস্তুতি থেকে শুরু করে বীজতলা তৈরি, চারা রোপণ, সার ব্যবস্থাপনা, পানি ও আগাছা নিয়ন্ত্রণ, রোগ ও পোকামাকড় দমন পর্যন্ত সকল পর্যায়ে কৃষকদের যথাযথভাবে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে বীজ শোধন, সার তিন ভাগে প্রয়োগ এবং কীটনাশকের ব্যবহার ফলন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এছাড়া, ফসল কাটার সময় শিষের ৮০-৮৫% সোনালি হলে ধান কাটা হয় এবং শুকিয়ে দানার আর্দ্রতা ১৪% এ নামিয়ে সংরক্ষণ করা হয়।
ভালুকার চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ১৮,৬৭০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। সরকারি প্রণোদনা, উন্নত বীজ ও সার সরবরাহ, মাঠ পর্যায়ের পরামর্শ ও তদারকির মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। তবে কিছু কিছু এলাকায় ঘাসফড়িংয়ের প্রাদুর্ভাব ক্ষতির কারণ হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় জানা গেছে, জুলাইয়ের শেষের দিকে BRRI dhan87 জাতের ধান রোপণ করলে প্রতি হেক্টরে সর্বোচ্চ ৬.৫৬ টন ফলন পাওয়া যায়। raised bed পদ্ধতি ব্যবহার ও উন্নত জাতের চাষ ফলনের মান বাড়িয়েছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এ ধরনের আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত চাষাবাদ পদ্ধতি মেনে চললে ময়মনসিংহের ধান চাষে ইতিবাচক উন্নয়ন হবে এবং নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চাষিরাও বন্যার ভয় কাটিয়ে ভালো ফলনে স্বস্তি পাচ্ছেন এবং শ্রমিকদের মজুরির বাজারও ভালো থাকার খবর পাওয়া গেছে।