৫০০ টাকায় ডিএমএফ, চিকিৎসক শ্বশুরবাড়িতে’—সংবাদ না অপপ্রচার? অনুসন্ধানে উঠে এল নতুন তথ্য
প্রতিনিধির নাম :
-
প্রকাশিত:
বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫
-
৯
বার পড়া হয়েছে

মাহিদুল ইসলাম মাহিন,কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি।
সম্প্রতি কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এক শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কয়েকটি গণমাধ্যমে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। “৫০০ টাকায় ডিএমএফ, চিকিৎসক শ্বশুরবাড়িতে” শিরোনামে প্রকাশিত খবরে ডা. কালী প্রসাদ সরকারকে দায়ী করা হয়। তবে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এক ভিন্ন চিত্র—যা পুরো ঘটনার বিশ্বাসযোগ্যতা ও নিরপেক্ষ তদন্তের প্রয়োজনীয়তাকে সামনে এনেছে।‘দৈনিক সকালের সময়’ সহ কিছু অনলাইন মাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হয়, ২৫ জুলাই রাতে ডা. কালী প্রসাদ সরকার দায়িত্বে না থেকে ৫০০ টাকায় এক ডিএমএফ পাস শিক্ষার্থীকে বসিয়ে রেখে শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছিলেন। সেই সময় জরুরি বিভাগে এক শ্বাসকষ্টজনিত রোগী, জামাল বাদশা (৫৫), মৃত্যুবরণ করেন।এই অভিযোগের ভিত্তিতে ২৭ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে ডা. কালী প্রসাদ সরকারকে ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। একইসাথে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।সংশ্লিষ্ট সূত্র এবং সহকর্মীদের দাবি, ২৪ জুলাই ডা. কালী প্রসাদ সরকার হাসপাতালের পথে একটি বাইক দুর্ঘটনার শিকার হন এবং রংপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন ছিলেন। দুর্ঘটনার পর তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান এবং বিকল্প চিকিৎসক নিয়োগের অনুরোধও করেন।তবে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ওই সময়ে জরুরি বিভাগে উপস্থিত ছিলেন একজন ডিএমএফ পাস শিক্ষার্থী, যিনি রোগীকে যথাযথভাবে দেখেননি বলেই অভিযোগ উঠে। এ সময় বারান্দায় পড়ে থাকা রোগীর মৃত্যুর ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়।ডা. কালী প্রসাদ সরকার একজন অত্যন্ত মেধাবী, মানবিক ও দক্ষ চিকিৎসক। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্বিদ্যালয়ের (সাবেক পি,জি, হাসপাতাল) কার্ডিওভাসকুলার ও থোরাসিক সার্জারিতে এম এস ফাইনাল পরীক্ষাথী। তার পাঁচটি পরীক্ষার মধ্যে ইতিমধ্যে দুটি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন।তিনি ৪ জুন ২০২৫ তারিখে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে যোগদান করেন এবং একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটির আবেদন জানিয়েছিলেন, যা এলপিসি জটিলতার কারণে মঞ্জুর হয়নি।ডা. কালী প্রসাদ সরকার বলেন, “আমি ২৪ জুলাই সকালে দুর্ঘটনার শিকার হই এবং সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে জানাই। আমি কোনোভাবেই প্রাইভেট ক্লিনিকে কিংবা শ্বশুরবাড়িতে ছিলাম না, এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মানহানিকর অপপ্রচার।”তিনি আরও বলেন, “রোগীর মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক এবং আমি আন্তরিকভাবে শোক প্রকাশ করছি। তবে চিকিৎসা কখনো নিশ্চিত ফল নয়, চেষ্টা করাটাই আসল দায়িত্ব।”জনসাধারণের একাংশ মনে করছেন, চিকিৎসকদের মানহানিকর উপস্থাপনা বন্ধ হওয়া উচিত এবং যেকোনো অভিযোগের ভিত্তিতে আগে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া আবশ্যক। একজন দায়িত্বশীল চিকিৎসকের সুনাম ধ্বংস করে দেওয়া সমাজ ও সেবার জন্য ক্ষতিকর।হাসপাতালের আরএমও ডা. নাজমুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। কে দায়ী এবং কার গাফিলতিতে এমন হয়েছে তা তদন্তেই পরিষ্কার হবে।” তিনি আরও জানান, “যদি কেউ অর্থের বিনিময়ে দায়িত্ব ছেড়ে দেন বা অনুপযুক্ত কাউকে বসান, তবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”একজন মানুষের মৃত্যু অবশ্যই দুঃখজনক। তবে তার পেছনে যিনি প্রকৃত দায়ী, সেটি নিরপেক্ষ তদন্তেই প্রমাণিত হওয়া উচিত। চিকিৎসকদের পেশাগত মূল্যবোধ, সম্মান এবং মানবিক প্রচেষ্টার মর্যাদা রক্ষা করাও আমাদের সামাজিক দায়িত্ব। সঠিক তদন্ত, তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন এবং গুজব প্রতিরোধই পারে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে।সঠিক তদন্ত, তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন এবং গুজব প্রতিরোধই পারে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে।
সংবাদটি শেয়ার করুন
আরো সংবাদ পড়ুন