সিরাজুল ইসলাম,জেলাপ্রতিনিধি, শরীয়তপুর
শরীয়তপুরের নড়িয়ার কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. হারুন অর রশিদকে হুমকি ও গালিগালাজ করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতা ও ডিঙ্গামানিক ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পদপ্রার্থী আব্দুল জলিল খানের বিরুদ্ধে। বিদ্যালয়ে ইউনিফর্ম না পরে আসায় তার ছেলেসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে আসতে বললে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে এ ঘটনা ঘটান।
রোববার (২৭ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসে তিনি শিক্ষক হারুন অর রশিদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তুই আমার ছেলেকে কেন বের করেছিস? তুই কি ফাটাকেষ্ট হয়ে গেছিস?”—এ সময় তিনি গালিগালাজও করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।এই ঘটনার পরপরই বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। পরে শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা গিয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত করে শ্রেণিকক্ষে ফেরত নিয়ে আসেন।বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ইউনিফর্ম পরিধান নিশ্চিত করতে সম্প্রতি অভিভাবকদের নিয়ে একটি সভা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় নির্ধারিত পোশাক ছাড়া কেউ বিদ্যালয়ে এলে তাকে ক্লাসে বসতে দেওয়া হবে না। সেই নির্দেশনার আলোকে সহকারী প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ শিক্ষার্থীদের নিয়ম মানতে বলেন।সহকারী প্রধান শিক্ষক বলেন, “শিক্ষার্থীর বাবা বিদ্যালয়ে এসে আমাকে বলেন, ‘তুই আমার ছেলেকে কেন বের করেছিস? তুই কি ফাটাকেষ্ট হয়ে গেছিস?’ এরপর গালিগালাজ করেন। পরে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জানতে পেরে মিছিল করে। পরে আমরা সবাই মিলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ক্লাসে ফিরিয়ে আনি।”বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন বলেন, “যিনি এমন আচরণ করেছেন, তিনি বিদ্যালয়ের জমিদাতা পরিবারের। তবে বিদ্যালয়ের পরিবেশ রক্ষায় বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আব্দুল জলিল খান বলেন, “আমার ছেলে কান্নাকাটি করে বাড়িতে এসে ঘটনা জানালে রাগের মাথায় কিছু কথা বলে ফেলেছি। পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী আমার বাড়িতে ভাঙচুর করতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি প্রতিবাদ করিনি—কারণ আমি বুঝেছি, আমার আচরণ সঠিক হয়নি। সবাই মিলে বসে বিষয়টি সমাধান করা হবে।”ডিঙ্গামানিক ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন খান বলেন, “খারাপ আচরণ যেখানেই হোক, তা খারাপই। দল করি বলে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। সকলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিষয়টি মীমাংসার পথে আছে।”বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নাজিবুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (আম্বার) বলেন, “আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল—ইউনিফর্ম ছাড়া কেউ ক্লাসে বসতে পারবে না। সেই নীতিমালার আলোকে শিক্ষক কাজ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিয়ে বসে আলোচনা করা হবে এবং যাঁর দোষ থাকবে, তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”