প্রিন্ট এর তারিখঃ জুন ২১, ২০২৫, ১০:০৭ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ২১, ২০২৫, ১০:১১ এ.এম
নুন খাওয়া উচ্চ বিদ্যালয়: সীমাহীন দুর্নীতির কালো চাদরে ঢেকে আছে এক সময়ের আলো ছড়ানো বিদ্যাপীঠ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে
নিজস্ব প্রতিবেদক ||
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নুন খাওয়া ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী নুন খাওয়া উচ্চ বিদ্যালয় আজ যেন দুর্নীতি আর অবহেলার বিষাক্ত ফাঁদে নিঃশেষ হয়ে যেতে বসেছে। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়টি ১৯৯৫ সালে এমপিওভুক্ত হলেও বর্তমানে এটি যেন ছায়াশরীর মাত্র — নেই তদারকি, নেই নিয়মিত পাঠদান, নেই ছাত্রছাত্রীদের স্বাভাবিক উপস্থিতি।দুধকুমার নদীর পাড়ঘেঁষা নদী-মাতৃক ও চরাঞ্চলবেষ্টিত এ বিদ্যালয়কে ঘিরে একসময় স্বপ্ন দেখত হাজারো কিশোর-কিশোরী। চর গুলোর মধ্যে রয়েছে—ভেলাকোপা চর, দোলাপাড়া চর, লেংগামার চর ও পশ্চিম নুন খাওয়া চর। শিক্ষার আলো পৌঁছানোর প্রত্যাশায় তৎকালীন স্থানীয় এক ব্যক্তি তিন একর জমি দান করেন বিদ্যালয়টির নামে।কিন্তু বর্তমানে বিদ্যালয়টির চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিশাল পরিসরের জমি থাকা সত্ত্বেও ব্যবস্থাপনার অভাবে বিদ্যালয়ের কার্যক্রমে নেই কোনো গতিশীলতা বা উন্নয়নের ছোঁয়া।সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়—বিদ্যালয়ের মূল মাঠটি এখন পরিণত হয়েছে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে। সেখানে গড়ে উঠেছে দোকানপাট, কিল্ডারগার্টেন স্কুল, বসতবাড়ি, এমনকি এনজিও সংস্থার অফিস পর্যন্ত।দুধকুমার নদী ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) কর্তৃক ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ থেকে যন্ত্রাংশ, রড, সিমেন্ট, জিও ব্যাগ ইত্যাদি সামগ্রী রাখা হচ্ছে বিদ্যালয়ের মাঠেই। এর জন্য মাসিক চুক্তিপত্র অনুযায়ী নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।অভিযোগ রয়েছে, এসব দোকান, সংস্থা ও নির্মাণ সামগ্রীর বিনিময়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হাবিবুল ইসলাম প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষাধিক টাকা, অথচ বিদ্যালয়ের উন্নয়নে তার বিন্দুমাত্র মনোযোগ নেই।এ ছাড়াও ইতি পূর্বে নিজের সিদ্ধান্তে বিদ্যালয়ের প্রায় ৪০-৫০টি গাছ কর্তন করেছেন বলেও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়টি এখন দুধকুমার নদীর ভাঙনের মুখে। এবারের বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। অথচ প্রধান শিক্ষকের অবস্থান নির্লিপ্ত, নীরব। অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেখানে শিক্ষক-অভিভাবক মিলে মানববন্ধন করেন প্রতিষ্ঠানের রক্ষার্থে, সেখানে নুন খাওয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক যেন বাণিজ্যিক স্বার্থে নীরব থেকেছেন।এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মোঃ হাবিবুল ইসলামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “আমি কিছু জানিনা। তবে যারা অবৈধ দখলে আছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”অন্যদিকে নাগেশ্বরী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শিব্বির আহম্মেদ জানান, “এমন অনিয়মের বিষয়ে প্রথম শুনলাম। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”নুন খাওয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়—এটি ছিল একসময় একটি স্বপ্নময় ভবিষ্যতের আশ্রয়। অথচ আজ তা দুর্নীতির কালো ছায়ায় ঢাকা পড়ে গেছে। স্থানীয়দের প্রত্যাশা—প্রশাসন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, ফিরিয়ে আনবে বিদ্যালয়ের গৌরবময় অতীত।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত