মোঃ শামীম হোসেন -স্টাফ রিপোর্টার
গত ১৫ এপ্রিল থেকে ৫৮ দিনের জন্য বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ হয়। যা চলবে ১১ জুন পর্যন্ত। এ সময় শেষ হওয়ার আগেই গত ১ জুন থেকে তিন মাসের জন্য সুন্দরবনে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে এখন উপকূলীয় জেলেরা অসহায় জীবনযাপন করছেন। তাদের বিকল্প কোনও কাজ না থাকায় পরিবার নিয়ে জীবনযাপন কঠিন হচ্ছে। সমুদ্রগামী জেলেরা খাদ্যসহায়তা পেলেও সুন্দরবননির্ভর জেলেদের এ খাদ্যসহায়তা দিতে সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করেছে। দাকোপের বানিশান্তা ইউনিয়নের খেজুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা অখিল রায় বলেন, ‘সাগরেও যেতে পারছি না। আবার সুন্দরবনের নদ-নদীতেও নামতে পারছি না। আমরা অন্য কিছু করতেও পারছি না। এখন কষ্টের জীবন চলছে। নদীতে নামতে পারলেও কিছু মাছ ধরে আয় হতো।‘বানিশান্তার আমতলা গ্রামের ইসমাইল শেখ বলেন, নিষিদ্ধ সময় তারাও মাছ ধরত চান না। কিন্তু স্থানীয় নদ-নদীত মাছ ধরার সুযোগ দেওয়া উচিত। সমুদ্রগামী জেলেদের চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬ কেজি। কিন্তু শেষ সময়ে এসে পাচ্ছেন ৫৪ কেজি। ৪-৫ সদস্যের একটি পরিবারের জন্য ৫৮ দিনে ৫৪ কেজি চালে কী হবে। চালের সঙ্গে অন্যান্য সবজি তরকারি, তেল-ডাল প্রয়োজন। কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের দেবচড় গ্রামের জেলে সুব্রত মন্ডল বলেন, তারা দিন আনেন দিন খায়। এ অবস্থায় তিন মাস তাদের কষ্ট থাকবে। তারা এ সময় সহযোগিতা বা বিকল্প কাজ চান। সমুদ্রের জেলেদের জন্য খাদ্যসহায়তার ব্যবস্থা থাকলেও সুন্দরবননির্ভর জেলেদের জন্য তেমনটি নেই
সমুদ্রগামী জেলেদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অ্যাওসড-এর নির্বাহী পরিচালক শামীম আরেফিন বলেন, ‘সমুদ্রগামী জেলেরা জীবনকে হাতর মুঠোয় রেখে সাগরে যান। আমিষের ঘাটতি পূরণসহ সুনীল অর্থনীতিতে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের আর্থিক ও সামজিক নিরাপত্তায় গুরুত্ব দিতে হবে।’ সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাসানুর রহমান বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞাকালীন সাগরের জেলেদের জন্য কিছু সহায়তা করা হচ্ছে। আমরাও বনজীবীদের ৪০ কেজি চাল দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। যা সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে।’খুলনা জেলা মৎস্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, খুলনা জেলার ৯টি উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার। যাদের মধ্যে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরেন প্রায় ৩২ হাজার জেলে। আর উপকূলীয় কয়রায় ১৩ হাজার, পাইকগাছায় প্রায় ৫ হাজার, দাকোপে ৩ হাজার, ডুমুরিয়ায় সাড় ৫ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, ‘সমুদ্রগামী জেলেদের জন্য খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সুন্দরবনের ওপর নির্ভর জেলেদের সহায়তার জন্য বন বিভাগের দাবি রয়েছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি মৎস্য দফতরকে জানানো হয়েছে। আমরা জেলেদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকার দেখছি।’
খুলনা বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সমুদ্রগামী জেলেদের খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সুন্দরবনের জেলেদের ব্যাপারে বন বিভাগ দেখবে। তাদের জন্য খাদ্যসহায়তা দিতে পারে ত্রাণ মন্ত্রণালয়। আবেদন করলে ওই মন্ত্রণালয়ে করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মৎস্য বিভাগের কিছু করণীয় নেই।