প্রিন্ট এর তারিখঃ মে ২, ২০২৫, ৪:৫৫ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ মার্চ ১৪, ২০২৫, ৭:১৫ এ.এম
লামায় যুবদলের নেতার পরিচয়ে চলছে একাধিক অবৈধ বালু উত্তোলন পয়েন্ট
মোঃ শফিকুল ইসলাম জেলা প্রতিনিধি বান্দরবান ঃ
বান্দরবান জেলার লামা উপজেলা ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কুমারী পেত্যাইনাছড়া এলাকায় একাধিক বার বার অভিযান, জরিমানা,সাজা দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করার পরও স্থানীয়ভাবে সচেতনতা সৃষ্টির পরেও বন্ধ করা সম্ভব হয়নি এই এলাকায় অবৈধ বালু উত্তোলন কর্মকাণ্ড।চারপাশ ম্যানেজ করে ঠিকই নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত এই সব অবৈধ উত্তোলন কারি ও বালু খেকোরা । অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হওয়ায় স্থানীয় অনেকেই তাদের নাম পরিচয় জানার পরেও ঝামেলা এড়ানোর জন্য নাম প্রকাশ করতে চাই না । স্থানীয়রা আরো বলেন এই এলাকাটি আমাদের লামা উপজেলার অন্তর্গত এরিয়া কিন্তু এই খানে পাশ্ববর্তী চকোরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কয়েক জন প্রভাবশালীরা এই খানে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস করে না ।বান্দরবানের লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের আশেপাশের বেশ কিছু এলাকা কুমারী, পেত্যাইনাছড়া থেকে চকরিয়ার উপজেলার ফাঁসিয়াখালী রিজার্ভ সংলগ্ন এলাকার আশ্রয়কেন্দ্র সীমান্ত পর্যন্ত চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন । সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুমারী পুলিশ ফাঁড়ির পেছনের রাস্তা পেত্যাইনাছড়া যাওয়া সড়ক থেকে শুরু করে লামা উপজেলার শেষ সীমানা চকোরিয়ায় রিজার্ভ নোয়াপাড়ার ছোট ব্রিজ পর্যন্ত ছড়া, নদী ও খাল হতে সেলু মেশিন বসিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে লামার পাশ্ববর্তী উপজেলা চকোরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক সিন্ডিকেট। স্থানীয় এলাকাবাসীদের তথ্য মতে প্রতিদিন ও রাতের অন্ধকারে গোপনে অবৈধ ভাবে সেলু মেশিন দিয়ে তোলা বালু এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুর দুরান্ত থেকে আসা ট্রাক, মিনি ট্রাক এবং দাম্পার গাড়ি ভর্তি বালু বিক্রি করে আসছে এই বালু উত্তোলনকারি সিন্ডিকেট সদস্যরা। বালু উত্তোলনের ফলে ইতিমধ্যে চকোরিয়া রিজার্ভ সংলগ্ন ও নদীর এপার ওপাড় দুই পাশ ভাঙ্গতে শুরু করেছে, এতে ভাঙ্গন হতে পারে নদীর তীরে এবং রিজার্ভ সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত আশেপাশের অসহায় দরিদ্র মানুষের ঘরবাড়ি গুলো। এছাড়া খালের পাড় ঘেঁষে অবাধি কৃষি জমি, ধানি জমি ও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, প্রভাব পড়তে পারে পেত্যাইনাছড়া এলাকা হয়ে গ্ৰামের ভিতর দিয়ে যাওয়া চকোরিয়া সড়কটি । স্থানীয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন এই বালু খেকোরা প্রতি বালু ভর্তি বড় ট্রাক গাড়ি থেকে ৩০০ ছোট মিনি ট্রাক ও বালু ভর্তি দাম্পার গাড়ি থেকে ২০০ টাকা করে প্রসাশন এবং সাংবাদিক ম্যানেজ করার নামে চাঁদা নিয়ে আসছে দীর্ঘদিন যাবত এই বালু পাচার কারি সিন্ডিকেট । খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই অবৈধ বালু উত্তোলনের সাথে যিনি প্রত্যেক্ষভাবে জড়িত সিন্ডিকেটের প্রধান মূলহোতা তাহের মেম্বার ।এ বিষয়ে জানতে তার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক আমাদের মাতৃভূমি কে স্বীকার করে বলেন, আগে চকোরিয়ার আওয়ামী লীগ নেতারা করেছে, বর্তমানে আমরা চকোরিয়া ও ফাঁসিয়াখালী বিএনপি এবং সহযোগি সংগঠনের কয়েক জন নেতারাসহ মিলে করছি । এখন এ বিষয়ে আর বেশি কিছু বলতে পারবো না, পড়ে আপনাদের সাথে যোগাযোগ করব । পরবর্তীতে কিছুক্ষণ পরে আবার ওনাকে ফোন করে এই ব্যবসায় কারা কারা জড়িত আছে জানতে চাইলে, তিনি জানান তার সাথে মোঃ গিয়াস উদ্দিন সভাপতি ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরোয়ার আলম সহ আরো বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা গোপনে জড়িত আছেন । তিনি আরো বলেন আমি বিশেষ একটা কাজে জরুরী বৈঠকে আছি আমি আপনার সাথে সরোয়ার কে যোগাযোগ করতে বলি বলে ফোনটা কেটে দেন । ঠিক পাঁচ মিনিটের ভিতরে হঠাৎ আমার নাম্বারে একটা কল আসে এবং পরিচয় দিয়ে বলে আমি চকোরিয়া ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরোয়ার ভাই বলছি, আপনাদের সাথে আমার ইউনিয়নের যুবদলের সভাপতি গিয়াস উদ্দিনের সাথে কোন কথা হয়নি, আমি যখন ওনাকে জিজ্ঞেস করি কোন বিষয়ে তখন ওনি আমাকে বললেন আপনারা এতো কষ্ট করে এই খানে এতো দূরে আসছেন আপনাদের সাথে আমি গিয়াস উদ্দিন কে এখনি যোগাযোগ করতে বলি এবং তিনি আমাকে ওনার তামাক ক্ষেত নিয়ে বেশি ব্যস্ত আছি বলে কলটা কেটে দেন । এর কিছুক্ষণ পর আমি এবং আমার সহকর্মীরা যখন ঐ স্থান থেকে লামার উদ্দেশ্যে রওনা হই ঠিক তখনি আমার কাছে আরেকটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে এবং পরিচয় দিয়ে বলে আমি যুবদলের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলছিলাম, আপনারা কি জানতে এবং বলতে চেয়েছিলেন নাকি যা বলার আমাকে বলেন ।আমি যখন ওনাকে জিজ্ঞেস করি আপনারা যে এই ভাবে ৮/১০ টা সেলু মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছেন আপনাদের কাছে কি পরিবেশ দপ্তর কিংবা উপজেলা প্রশাসনের কোন অনুমতি আছে কিনা আপনাদের জানতে চাইলে সাথে সাথে যুবদল নেতা গিয়াস উদ্দিন উওেজিত হয়ে অকথ্য ভাষায় আচার আচরণ করে এবং বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদর্শন করে বলেন, আমি গিয়াস উদ্দিনের অতীতেও অনেক রেকর্ড আছে তোদের মতো সাংবাদিকদের গাছের সাথে হাত, পা বেঁধে রেখে পিটানোর। এক পর্যায়ে তিনি নিজেকে অনেক বড় মাপের নেতা ও ক্যাডার দাবি করে বলেন তোমরা সাংবাদিকরা আমাদের বিরুদ্ধে নিউজ করে যা করতে পারো করো, তবে তোরা সাংবাদিকরা একটা কথা মনে রাখবি এইখানে আমি গিয়াস উদ্দিন যা বলি তাই হয়।এর বেশ কিছু দিন আগে ও এই বালুর পয়েন্টে গুলোতে সেনাবাহিনী সহ মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করে (৫ )জন কে আটক করে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর (১৫) ১ ধারা মোতাবেক বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন ভ্রাম্যমান আদালত ।এই বিষয়ে ,লামা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন বলেন পরিবেশ বিপন্নকারি কাউকে কোন ভাবে ছাড় দেয়া হবে না ,লামা উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি) রুপায়ণ দেব বলেন, অতি শীঘ্রই এই অবৈধ বালু উত্তোলনকারী ও পাচারকারী চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত